বিরিয়ানি

বৃষ্টি ভেজা (জুলাই ২০২২)

সুপ্রিতি ভট্টাচারিয়া
  • 0
  • 0
  • ৫৩
আজ সারাদিন আকাশ যেন ভেঙে পরেছে। সুজয় অফিস যাবে বলে তৈরী হয়েও ঘর থেকে আর বেরতেই পারলো না। ঐ জামা পরেই টিভির সামনে বসে পরে। Bachelor সে। রান্নার মাসি রান্না করে ঘর দোর গুছিয়ে প্রতিদিন যায়। তাই খেয়েই সুজয় রোজ অফিস ঘর করছে আজ পাঁচবছর। আজও খেয়েদেয়ে বেরোবে বলেই তৈরী হয়ে ছিল । কিন্তু কিছুতেই বেরোতে পারলো না । একে এতো জোর বৃষ্টি সকাল থেকে , তাতে আবার তাদের বাড়ির চার পাশে অল্প বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়। আর এই ভারি বৃষ্টিতে বাড়ির ভিতর অব্দি জল থৈ থৈ করছে। অফিসে একটা Urgent meeting আছে আজকেই। Head অফিসের থেকে সবাই আসবে। Mumbai থেকে Maneger Mr.stuat আসবে। ওদের flight land করেছে কাল রাত 12 টায়। তারা Park hotel এ উঠেছে। সুজয়ের যাওয়া urgent ছিল। কিন্তু এই সুদুর গড়িয়া থেকে যাবে কি করে? কোন Ola বা Taxi কিছুই মিলছে না। তার ওপর তার বাড়ির পেছনে ধাপা বস্তি। গন্ধে টেকা দায়। এই বৃষ্টিতো অকাল বর্ষণ। টিভিতে রিপোর্ট দিচ্ছে নিম্নচাপ থেকেই এই বর্ষণ। কদিন ধরেই গরমে রাস্তায় বেরনোর উপায় ছিলোনা। আর আজ শেষ রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
সুজয় অন‍্যদিন কাজের মধ‍্যে থাকে,আজ তার কাজ না থাকাতে অখণ্ড অবসর। আজ এই বর্ষণ মুখর দিনে তার কেবলি মনে পড়ে যাচ্ছে কলেজ লাইফের কথা। যোগেশচন্দ্র কলেজের Student ছিল সে।
চন্দ্রিমা কলেজের বন্ধু ছিল সেই সময়ে । চন্দ্রিমা Morning এ পড়তো l সুজয়রা Day তে। একদিন এরকম বর্ষণ মুখর দিনে চন্দ্রিমা কলেজে এসে আটকে যায়। কিছুতেই বাড়ি ফেরার বাস পায় না। তখন সুজয় নিজে তাকে ছাতা মাথায় করে বাড়ি পৌঁছয়। মনে আছে সুজয় চন্দ্রিমা কে নিয়ে একই ছাতার নিচে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে প্রথম কাছাকাছি হয়েছিল। তখন থেকেই তারা ধিরে ধিরে প্রথমে বন্ধুত্ব তারপর তাদের মধ্যে একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ক্রমশ সেই বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠতায় পৌঁছেছিল। প্রায় প্রতিদিনই ভিক্টোরিয়া গিয়ে তারা বসতো । নবীনায় matiny show এ কত ঘনিষ্ঠ মূহুর্ত্তের কথা আজ সুজয়ের কেবলি মনে পড়তে থাকে। এই রকম ‘বৃষ্টি ভেজা’ দিনে কত ঘনিষ্ঠ তারা হয়েছে । হয়তো বিয়েও হতো। কিন্তু একটা ঝড় এসে সব ওলট পালট করে দিল।
‘জীবনের ঝড়’। হঠাৎ চন্দ্রিমার বাবা আমেরিকা নিবাসি এক ছেলে দেখে চন্দ্রিমার সঙ্গে সন্মোন্ধ করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিয়ে ঠিক করে মেয়ের বিয়ে দেয়। সেই যে সুজয়ের মনের ওপর আঘাত আসে, সেই থেকে সে মুসরে পড়ে। মেয়েদেরকে এড়িয়ে চলতে থাকে। এমনকি অফিসেও মেয়েদের থেকে দুরত্ব রেখেই চলে।
এ সবই অতীতের Album।
আজ এই বর্ষণ মুখর দিনে সুজয়ের এই সবই খালি মনে পড়ছিল।
বেলা 12 টা বাজতে সুজয় ছাতা টা নিয়ে বেরলো বাজারের পথে।আসলে এই বর্ষায় খুব বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে। বাজারের কাছে যে বিরিয়ানির দোকান টা আছে সেখান থেকে দু প‍্যাকেট বিরিয়ানি কেনার উদ্দেশ্যে । যদি দোকান টা খোলা পায়। ধাপার মাঠ টা ঘুরে গেলে বাজার কাছে পড়ে। তাই সে সেপথ ধরলো। ধাপার মাঠের কাছাকাছি পৌঁছে সে দেখলো কতগুলো 12-13 বছরের ছেলে কিসব বস্তায় পুরছে ঐ বর্ষায়। সে যেমনি এগিয়ে গেছে ওকে দেখে বস্তা ফেলে ছুট। সুজয় ভাবলো যে নিশ্চয়ই কোন কিছু লুকিয়ে চুড়িয়ে করার জন্য এই বৃষ্টিতেও এসেছে। সে এগিয়ে যায় ঐ বস্তার দিকে, কি আছে এমন ওকে দেখে ছেলেগুলা পালিয়ে গেল?। কাছাকাছি যেতে দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে উঠলো। কোন রকমে রুমালে নাক মুখ চাপা দিয়ে কাছে গিয়ে বস্তায় কি আছে উকি মারলো। বুঝলো কোন লাসের বডি।
তখন ও ছেলে গুলোর উদ্দেশ্যে কথা ছুড়ে দিল। “ বেরিয়ে আয় না তো পুলিশে খবর দেব’। পুলিশের নাম শুনে গাছের ডাল টা যেন নড়াচড়া করলো। ‘তারাতারি আমার সামনে আয়,নাতো আমি থানায় চললাম’। ছেলেগুলো ভয়ে তারাতারি গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে বলতে থাকলো ‘ কাকু ছেড়ে দিন।সুজয় বললো ‘ কি আছে এর মধ্যে?’
ছেলে গুলো চুপচাপ।কেউ কিছু কথা বলে না।
সুজয় তখন ধমকে উঠলো। বললো ‘আমি কিন্তু থানায় যাব লোক ডেকে নিয়ে আসবো’।
একটা ছেলে তখন বলে উঠলো ‘কাকু এর ভিতর তেমন কিছু নেই। মরা শুয়োর দুটো আর ছোট শেয়াল কতকগুলো। আর কিছু নেই।‘
‘এগুলো কি করবি তোরা’?
‘এগুলো পার্কসার্কাস বিরিয়ানির দোকানে দেব’।
‘কেন বিরিয়ানির দোকানে কেন?এগুলো বিরিয়ানির দোকানে কি করবে’?
‘কাকু ওরা তো ঐ দিয়েই বিরিয়ানি বানায়’।
সুজয় শুনে তো হাঁ। ও প্রায় চেঁচিয়ে বলে ‘তোরা কি সব আজেবাজে কথা বলছিস। বাজে বকবার জায়গা পাসনি।নিজেদের দোষ ঢাকবার জন্য অত বড় দোকানের নামে আজেবাজে কথা বলছিস। কলকাতা শহরের ওপর অত তাদের নাম ডাক তাদের নামে দোষ দিচ্ছিস’। তারা তখন বলে , ‘ওরা তো অনেক দিনই আমাদের কাছ থেকে নেয় কাকু’। একটি ছেলে তখন বলে ওঠে, ‘না কাকু কালীর দিব‍্যি ‘ ওরা ঐগুলো কেনে ঐ বিরিয়ানি বানানোর জন্যই’।
সুজয় সব শুনে অবাক। তার শরীরের ভিতর গুলিয়ে ওঠে।
‘তা এখানেও তো বিরিয়ানির দোকান আছে, এখানে না দিয়ে তোরা পার্কসার্কাস যাচ্ছিস?’
‘কাকু এখানকার দোকান তো কম দাম দেয়, ওদিকের দোকানগুলো তো বেশি দাম দেয়। তাই ওদিকে নিয়ে যাচ্ছি।‘
‘তোরা সত‍্যি কথা বলছিস তো? আমি যাব তোদের সঙ্গে ঐ বিরিয়ানির দোকানে ‘।
ওরা তখন বলে ‘ কিন্তু কাকু তোমাকে দেখলে ওরা আমাদের থেকে আর মাল নেবে না কোনদিনও, ওরা বাইরের লোক কে সঙ্গে আনতে বারন করে। আমাদের বকবে, আমাদের থেকে আর মাল নেবেনা কোনদিনও।‘
তখন সুজয় একটা বুদ্ধি করলো। বললো ‘ আমি তোদের সঙ্গে যাব কিন্তু ওখানে গিয়ে দুরে থাকবো ‘।
‘কিন্তু মনে রাখবি আমি কিন্তু দুর থেকে তোদের লক্ষ্য করবো।‘
ওরা তখন রাজি হলো।
‘কি করে যাবি তোরা’?।
ওরা বলল হেঁটে ‘যাব কাকু’।
সুজয় মনে মনে প্রমাদগুনলো, কিন্তু মুখে কিছু বললো না। বলল ‘চ’।
পার্কসার্কাস কি এখানে, যদিও ছেলে গুলো সর্টকাট রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এই বৃষ্টিতে রাস্তা যেমন খারাপ তেমনি রাস্তায় বৃষ্টি জল কাদা। কোন রকমে সেই সব মারিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যখন বিরিয়ানির দোকানে পৌঁছল তখন বেলা চারটে প্রায় বাজে।
দোকানের কাছাকাছি আসতে ছেলেরা বললো কাকু এসেগেছি।
সুজয় ছেলে গুলোকে বললো তোরা এগো,আমি এইখানে দাঁড়াচ্ছি।
সুজয় দেখলো ছেলেগুলো main gate দিয়ে না ঢুকে পেছন দিকে গেল।
সুজয় তখন তারাতারি করে মাথাটা ছাতায় ঢেকে ওদের অনুসরন করে এগিয়ে গেল। তাকে যেন কেউ বুঝতে না পারে তাই মুখটা যথা সম্ভব আড়ালে রাখলো। দেখলো ছেলেগুলো তাকে মিথ্যা কথা কিছু বলেনি। একটি লোক ওদের হাত থেকে ঐ মরা মাংসর থলি টা নিয়ে কিছু টাকা দিলো। একটা ছেলে টাকাটা গুনে নিয়ে কিছু বললো, তখন ঐ লোকটা ছেলেটাকে মুখ বেঁকিয়ে হাত নেড়ে তারানোর মতো করে উঠলো। সুজয় সেটা দেখে বুঝতে পারলো ওদের কম টাকা দিয়ে ঠকাচ্ছে। ওর ব‍্যাপারটা ভালো না লাগলেও, ও এগিয়ে যেতে পারলো না। লোকটা ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। ছেলেগুলো চলে আসতে সুজয় জিজ্ঞাসা করে ‘তোদের কি বলছিল লোকটা’ ?
যে ছেলেটাকে তারাছিল সেই ছেলেটা তখন বলে,’কাকু ঐ শালা লোকটা মালিক যা টাকা দেয় মাংসের তার থেকে ঝাড়ে।‘
সুজয় বলে ‘ তোরা মালিককে গিয়ে বলেদে’।
ওরা তখন বলে ‘ আমরা দেখা করবো কি করে?আমাদের তো ভেতরে ঢুকলে বকবে।‘
সুজয় তখন বলে’ দেখ, তোদের হয়ে যে আমি বলবো সে উপায়ও নেই । আর তোরা যে কাজটা করছিস সেটা যেমন অন‍্যায় আর ওরা যেটা করছে সেটা আরো অন‍্যায়। আমি বলিকি তোরা এই কাজ ছেড়ে অন্য কাজ কর। কত দেয় ওরা তোদের?’
‘কাকু ওরা প্রথমদিকে 1000 টাকা করে দিত আর এখন 600 টাকা দিচ্ছে। আজ 600 টাকা দিয়েছে’।
সুজয় বলে ওদের , ‘তোরা আর তার সাথে ওরাও যে কাজ টা করছিস বেআইনি জানিস? ধরা পড়লে আজীবন জেল খাটবি। ওরা পয়সার জোরে বেরিয়ে আসবে কিন্তু তোদের কেউ বাঁচাবে না। অন্য কোন কাজ খোঁজ। আমিও দেখছি। কোন বড় গ‍্যারেজে বা অন্য কোনো জায়গায় কাজ থাকে যদি তোদের ঢুকিয়ে দেব। ওরা কিছু বলে না।
সুজয় ছেলেগুলোকে বললো ‘তোরা কি করে এই সব কাজের লাইনে এলি?’
ছেলে গুলো বললো ‘আমাদের পাড়ার নন্টে কাকা আমাদের কে এই কাজ শিখিয়েছে’।
‘ তা সে কাকু কোথায়?’
‘কাকুর তো অসুখ করে ছিল। ভারি অসুখ, ভারি অসুখে মরলো। সেই থেকে আমরা একাই করি। ধাপা ঘেঁটে মাল তুলি, মাল তুলে দিয়ে আসি।‘
সুজয় ভাবলো তখন, এ সব প্রবলেম মানে এই ছেলগুলোর সমস্যা সে একা সমাধান করতে পারবে না। করতে গেলে কারো সঙ্গেঁ আগে আলোচনা করতে হবে। সে ছেলেগুলোকে নিয়ে বাড়ি ফেরবার জন‍্য এগুলো। ছেলে গুলোকে নিয়ে একটা গাড়ি ভাড়া করে বাজারের কাছে এসে থামলো। বলল তোরা কোনদিকে যাবি?
ওরা বলল আমরা ধাপাার পেছনে যে বস্তি আছে সেখানে থাকি। সুজয় ওদের ধাপার কাছে নামিয়ে গাড়ি টা ছেড়ে দিল। বৃষ্টি একটু ধরেছে। সে সেই সকাল বেলা বেরিয়েছিল বিরিয়ানি কেনার জন্য, তারপর যা যা ঘটলো ওর জীবনে ওর চোখের সামনে,ও কি আর এরপর বিরিয়ানি মুখে তুলতে পারবে ???
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

১১ মার্চ - ২০২২ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪